খুলনা বিভাগে ৩৬৩ ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত, হাসপাতালে ভর্তি ২২৪ || AndNewsBD



১০জেলার মধ্যে আটটিতে 
কিটস আছে দু’টিতে নেই
বর্তমান সময়ের এক আতংকের নাম ডেঙ্গু। প্রথমে জ¦র, শরীরে প্রচন্ড ব্যথা তারপর রক্তক্ষরণ। এভাবে এডিস নামক মশার কামড় থেকে যে জ¦রের সৃষ্টি হয় তার নামই ডেঙ্গু জ¦র। সারাদেশের ন্যায় খুলনাও ডেঙ্গু আতংক থেকে মুক্ত নয়। ইতোমধ্যে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। এ পর্যন্ত বিভাগে ১৩৮জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২২৪জন। এ হিসাব গতকাল বুধবার পর্যন্ত। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত এ হিসাব সংগ্রহ করা হয়েছে। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে ইতোমধ্যে সকল চিকিৎসকের ছুটি বাতিল ছাড়াও যারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে রয়েছেন তাদেরকেও প্রশিক্ষণ ছেড়ে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন। 
স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের হিসাব মতে, গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায়ই বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় যশোরে। অর্থাৎ ২৭জন। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল খুলনা অর্থাৎ ২৪জন। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় কুষ্টিয়া ১৪জন, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলে ৫জন করে এবং চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে দু’জন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘন্টায় বাগেরহাটে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানালেও সেখানে এ পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আটজন। এর মধ্যে এখনও একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 
খুলনা বিভাগে শুধুমাত্র গত এক মাসে(জুলাই-২০১৯) ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬০জন এবং জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ১৩৮জন চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছেন। তবে হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছেন ২২৪জন। আর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। 
ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেহেতু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯৫% রোগীই ঢাকা থেকে আসা সেহেতু বাস-ট্রেনে মশা মারার ওষুধ দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। খুলনা বিভাগের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মেডিকেল টিম গঠন, স্কুল-কলেজে অবহিতকরণ সভা, লিফলেট বিতরণ ও ব্যানার টানিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ চলছে। প্রতিটি জেলা পর্যায়ে লিফলেট তৈরি ও বিতরণ করা ছাড়াও বিভাগীয় পর্যায়ে এক হাজার লিফলেট ও ১০টি ব্যানার তৈরির কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো টানিয়ে ও বিতরণ করে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে। সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে মশা মারার ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকারি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য কোন প্রকার ফি নেয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় কিটস সংগ্রহ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত খুলনা জেনারেল হাসপাতালে একশ’, বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ১০টি, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ৬৪টি, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ১৫টি, কুষ্টিয়া আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১২টি, মাগুরা সদর হাসপাতালে ১০টি, নড়াইল সদর হাসপাতালে ৫০টি এবং যশোর আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৪০টি ডেঙ্গু কিটস মজুদ ছিল বলেও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) জানিয়েছেন। তবে শুধুমাত্র মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে কোন কিটস মজুদ নেই। এজন্য তাদেরকে স্থানীয়ভাবে কিটস্ সংগ্রহের তাগিদ দেয়া হয়েছে। 
স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারী পরিচালক(রোগ নিয়ন্ত্রণ) এবং বিভাগীয় মনিটরিং সেলের প্রধান ডা: ফেরদৌসী আক্তার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার আলোকে চিকিৎসকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সকল প্রকার নৈবর্ত্তিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এমন নির্দেশ দেন। এমনকি ঈদ-উল-আযহার ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর নিজস্ব উদ্যোগে প্রচারণা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লিফলেট ছাপাতে ও ব্যানার তৈরি করতে দেয়া হয়েছে। ২/১দিনের মধ্যেই লিফলেট বিলি এবং ব্যানার টানানো হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: এসএম কামাল বলেন, শুধুমাত্র খুমেক হাসপাতালেই এ পর্যন্ত ২৭জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এসব রোগীদের অধিকাংশই ঢাকা থেকে আগত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: এএসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খুলনা মহানগরীসহ জেলায় এ পর্যন্ত ১০৮জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৩জন এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৪৫জন। স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের দেয়া তথ্যে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি ৬২জন উল্লেখ করা হলেও গতকাল বিকেলে আরও একজন রোগী ভর্তি হন বলেও সিভিল সার্জন জানান।
খুলনার ডেঙ্গু রোগী সম্পর্কে সিভিল সার্জন জানান, গতকাল বুধবার খুমেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৪৬জন এবং আগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৭জন অর্থাৎ খুমেক হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয় ৭৩জন। এছাড়া খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৫জন চিকিৎসাধীন এবং একজন চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে গাজী মেডিকেল কলেজে সাতজন রোগী সনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন চিকিৎসাধীন এবং চারজনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে, সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ১৮জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হন ৮জন আর আগে ছাড়পত্র দেয়া ১০জনকে। খুলনা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে মোট তিনজন রোগী সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজন চিকিৎসাধীন এবং দু’জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। খুলনা মহানগরীর বাইরে ফুলতলা এবং পাইকগাছায় একজন করে মোট দু’জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে বলেও সিভিল সার্জন জানান। 
ডেঙ্গু থেকে রক্ষায় করণীয় ঃ ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালো পলিথিনের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, ঘরের পার্শ্ববর্তী ঝোপঝাঁড় কিংবা মশা লুকানোর স্থানগুলি পরিষ্কার রাখা, দিনের বেলা শিশুদের ঝোপঝাঁড় অথবা বাগানের পাশে যেতে না দেয়া, স্কুল-কলেজ ও বাড়ির আঙ্গিনা, ডোবা-পুকুর, নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখা, নির্দিষ্টস্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি লম্বা হাতাযুক্ত জামা ও ট্রাউজার পরিধান করা উচিত। এছাড়া ঘুমানোর সময় মশারি টানিয়ে ঘুমানো এবং জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মশারির ভিতরে রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

No comments

Powered by Blogger.